এসএম তাজাম্মুল, মণিরামপুরঃ নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ, ধুলাবালিতে বিভিন্ন রকম রোগের জীবানু প্রবেশ করছে সাধারন মানুষের শরীরে। বিপদগ্রস্থ হতে চলেছে মানবজীবন।

পরিবেশ ও মানুষের ক্ষতি হচ্ছে জেনেও কোন ভাবেই থামছেনা যশোরের মণিরামপুরের মাটিকাটা সিন্ডিকেটের বেপোরোয়াভাবে মাটি কাটা। বিভিন্ন ভাটা মালিকদের সম্পৃক্ততায় চলছে এই সিরিয়াল মাটি কাটার হিড়িক।

ফসলি জমি,রাস্তার পাড়,এমনকি বসতবাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এই মাটি খাদকদের জন্য।শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাটের মাঝখান দিয়ে বেআইনি ট্রলি ও ড্রাম ট্রাকে করে মাটি আনা নেওয়া করছে বাংলাদেশের ২০১০এর ভূমি আইন অমান্যকারী এসমস্ত মাটি ব্যাবসায়ীরা।

সম্প্রতি মণিরামপুর উপজেলা প্রশাসন দ্বারা কয়েকটি স্পটে মাটি কাটা ভেকুসহ একাধিক মাটি ব্যবসায়ীদের জরিমানা করলেও থেমে নেই মাটি কাটার এই মহোৎসব।

এদিকে মণিরামপুর উপজেলার ৭নং খেদাপাড়া ইউনিয়নের কাশিপুর গ্রামের জৈনক আব্দুস সাত্তারের ছেলে মোঃ ইমরান হোসেন ৪ মাস যাবত একাধিক স্পট থেকে মাটি কেটে স্থানীয় মুন ভাটা সহ বিভিন্ন ভাটায় বিক্রি করে যাচ্ছে।কারো কথা না শুনে ও ভূমি আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে একক ভাবে সিরায়ালে বিভিন্ন স্পট থেকে মাটি কাটছে মণিরামপুরের মাটি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের স্ব-ঘোষিত সম্রাট এই ইমরান।

সরকারি রাস্তা নষ্ট করে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠের মাঝদিয়ে এমন বেপোরায়া হয়ে মাটি পরবহন দেখে এলাকাবাসীরা অতিষ্ঠ হয়ে এই বিষয়ে সাংবাদিকদের জানালে সরেজমিন পরিদর্শন করে একটি টিম।
স্থানীয়দের তথ্য ও সাংবাদিকদের অনুসন্ধান মোতাবেক,খেদাপাড়া ইউনিয়নের কাশিপুর গ্রামের “আহম্মদ আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠ সংলগ্ন জৈনক শহিদুল ইসলামের একটি ফসলি জমি কেটে ভাটায় বিক্রি করছে ইমরান। মাটি বহনের জন্য ট্রলি ও ড্রাম ট্রাকের রুট করে নিয়েছে ঐ বিদ্যালয়ের ও স্থানীয় ছোট-বড় বয়সের খেলাধুলা করার মাঠটিকে। স্কুল মাঠ সংলগ্ন জমি থেকে মাটি কাটায় মাঠের একপাশে দেখা দিয়েছে ভাংগন।স্কুল মাঠি দিয়ে দিনে ১০/১২টি যান চলাচল করায় খেলাধুলা করতে ভয় পাচ্ছে কোমলমতী শিশু ও যুবকেরা।

স্কুল মাঠ থেকে উঠতেই দেখা যায় মাটির গাড়ি যাওয়াতে স্কুলের প্রবেশমুখের ডান পাশে রাস্তা ভেংগে পুকুরের সাথে মিশে গেছে। আবার মাটি ক্রেতা মণিরামপুর-রাজগন্জ রোডের মুন ভাটায় সিরিয়ালে মাটির গাড়ী ঢোকাতে দেখা দিয়েছে রাস্তার ভাংগন এবং ব্যস্ততম পথচারীদের অন্যতম সমস্যার কারণ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ” আহম্মদ আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের” পাশের এক বাসিন্দা জানান,আজ ৪ মাস যাবত এই ইমরান এই রাস্তা দিয়ে স্কুল মাঠ হয়ে সমস্ত মাঠের মাটি কেটে জৈনক মিঠুর(মুন ভাটা)তে বিক্রি করে আসছে।কেউ কিছু বললে তার উপর তেড়ে আসে,হুমকি দেয়।এই ভয়ে কেউ কিছু বলেনা।কিন্তু এখন যা দেখা যাচ্ছে দিন গেলেই রাস্তা নষ্ট হচ্ছে, স্কুলের মাঠে খেলাধুলা বন্ধ, ছোট ছোট বাচ্চারা স্বাচ্ছন্দ্য চলাফেরা করতে পারছেনা,এমনকি মাটি পড়ে হালকা পানি হলেই রাস্তায় কাদা হয়ে মরনফাঁদও তৈরি হয়।

স্পট পরিদর্শনের সময়ে ৮/১০বছরের একটি ছেলে ছুটে এসে সাংবাদিকদের বলে, কাকু উনাদের একটু বলে দেন মাটির গাড়ি অন্য কোন রাস্তাদিয়ে নিতে।আমরা বিকালে স্কুলমাঠে একটু খেলাধুলাও করতে পারিনা।
আহম্মদ-আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিচয় গোপন রাখা সর্তে এক শিক্ষক বলেন, ইমরানকে বারন করলেও শোনেনা,পরিবেশ ক্ষতির পাশাপাশি স্কুল চলাকালীন মাটি ভর্তি ভারী গাড়ির চলাচলে শিক্ষার্থীরা ভয়ে স্বাভাবিক ঘোরাফেরা করতে পারেনা বিদ্যালয়ের উন্মুক্ত মাঠে।

তথ্য সংগ্রহকালে সরেজমিনে দেখা মেলে ইমরানের সাথে। ভূমি আইনের নিষেধাজ্ঞা ও পরিবেশ নষ্টের কথা বলে জানতে চাইলে ইমরান বিভিন্ন মহলে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে।একপর্যায়ে ৩/৪জন সাংবাদিকের সামনে বলেন,উপজেলা প্রশাসন ও মণিরামপুর উপজেলার বড় বড় নেতাদের আমার এই মাটি কাটার বিষয় জানে। গণমাধ্যম কর্মীদের লক্ষ্যকরে ইমরান আরো বলেন,সাংবাদিকদের কাজ এটা না,আপনারা চলে যান। আমার কাজ আমারে করতে দেন।স্থানীয় মেইন রোডের পাশে মুন ভাটার মালিক মোঃ মিঠু হোসেনের সাথে এ বিষয়ে সম্পৃক্ততা আছে বলে ইমরান নিজে জানান। তিনি বলেন,মিঠু ভাইয়ের ভাটায় আমি মাটি দেয়।তিনিই এ ব্যাপারে ভালো বোঝেন।
মাটিকাটার স্পটে থেকেই মণিরামপুর সহকারী কমিশনার(ভূমি) আলী হাসানের সাথে যোগাযোগ করলে।তিনি হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে তথ্যনির্ভর ডকুমেন্টস চান।তথ্য দেওয়া মাত্রই তিনি রিপ্লেতে সাংবাদিকের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এ ব্যাপারে আমি ব্যাবস্থা নিচ্ছি।